উখিয়ার আসন্ন ৩নং হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের একক দলীয় প্রার্থী হিসেবে সৎ, যোগ্য ও জনপ্রিয় একজন আওয়ামীলীগ নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবী জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে কোর্টবাজারস্থ একটি অফিসে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সহ অপর ২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থী এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ ইসলামকে গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগ আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবী জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হলদিয়াপালং ইউ,পি, চেয়ারম্যান ও উখিয়া আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন মিন্টু, অপর সহ-সভাপতি চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলম, উখিয়া আওয়ামীলীগ নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় একক প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে গত ১২ এপ্রিল বিকালে মরিচ্যাপালং উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলদিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টু, অধ্যক্ষ শাহ আলম, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও আমিনুল হক আমিনের নাম ক্রমানুসারে উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগ বরাবরে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু বর্তমান হলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম কতিপয় ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নামের তালিকা প্রেরণ করেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। এ খবর জানাজানি হলে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে প্রতিবাদ, নিন্দা ও ক্ষোভ দেখা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্তকে অসম্মান করে ইউনিয়ন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সেক্রেটারী বিতর্কিত ব্যক্তি আমিনুল হক আমিনকে প্রাধান্য দিয়ে যে তালিকা প্রেরণ করেছে তা গঠনতন্ত্র বিরোধী। ইতিপূর্বে দলীয় সিদ্ধান্ত গৃহীত না হওয়ার আগেই আমিনুল হক দলকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মরিচ্যা বাজারে কলা গাছ রোপন করে আওয়ামীলীগের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। তাছাড়া উক্ত আমিনুল হক এলাকায় একজন চিহ্নিত ইয়াবা সম্রাট, কালোবাজারী, তার সুনির্দিষ্ট আয়ের কোন উৎস না থাকলেও প্রচুর কালো টাকার মালিক সে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, ইয়াবা ও মাদক পাচার সহ একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েক দিন পূর্বে তার ভাই সিরাজুল হক ইয়াবা নিয়ে উখিয়া থানা পুলিশের নিকট আটক হয়। কার্যত সে একজন আগাগোড়া অসামাজিক ও রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডে লিপ্ত। এ ধরনের একজন ব্যক্তির হাতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গৌরবোজ্জল প্রতীক নৌকা তুলে দেওয়া হলে এখানে ভরাডুবি নিশ্চিত।
আমিনুল হক আমিন কোন সময় দলীয় স্বার্থে আওয়ামীলীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু বিএনপি থেকে। ১৯৯৯ সালে আওয়ামীলীগের আমলে তৎকালীন আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যানদের সাথে আওয়ামীলীগের সাথে কোর্টবাজারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ওই সময় বিএনপির সমর্থিত চেয়ারম্যানদের পক্ষ হয়ে আমিনুল হক আমিনের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছিল। ২০০১ সালে হলদিয়াপালং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করে বিএনপি নেতা আকতার আহমদ চৌধুরীর কাছে হেরে যায়। পরে জামায়াত রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। বিগত ক্লিনহার্ট অপারেশনের সময় একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী হিসেবে র্যাব বাহিনী তাকে আটক করেছিল এবং পরবর্তীতে জামায়াত নেতা এড. শাহজালাল চৌধুরীর করুণায় মুক্তি পায়।
সংবাদ সম্মেলন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টু বলেন, ১৯৮১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সৌদিআরব প্রবাসী হয়ে সেখানকার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ২০০৩ সালে দেশে এসে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সর্বশেষ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করি। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদির সহায়তায় এলাকায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত করি। সর্বদা জনসেবায় নিয়োজিত থেকে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে চোর, ডাকাত, মাদক ব্যবসায়ী সহ অপরাধীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিই। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে জানানো হয়, হলদিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ ইসলাম গত ১৮ এপ্রিল ওই ইউনিয়নের বিএনপির একক প্রার্থী শামশুল আলম বাবুলের বাড়িতে রাতে অনুষ্ঠিত কর্মী সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন। এতে যে কোন মূল্যে বিএনপি প্রার্থীকে নির্বাচিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করায় দলের যাবতীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে আওয়ামীলীগের সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবী জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, আমি একজন যোগ্য ও সৎ প্রার্থী। আমি শহীদ পরিবারের সন্তান। এলাকার গণমানুষের সাথে আমার পরিবারের সুসম্পর্ক থাকায় আগামী নির্বাচনে এলাকাবাসী আমাকে একক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেলে নিরঙ্কুশভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী হলদিয়াপালং ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এলাকার সাধারণ লোকজনের সাথে পারিবারিক ও ঐতিহ্যগতভাবে আমরা জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। আওয়ামীলীগ থেকে আমাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হলে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উখিয়া আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মাষ্টার ছৈয়দ আলম, বখতিয়ার উদ্দিন আহমদ, মোঃ ইদ্রিস, ছালেহ আহমদ প্রমূখ।
পাঠকের মতামত: